Dr. Abdun Noor

ড. আবদুন নূর পেশায় শিক্ষা এবং মানবসম্পদ উন্নয়ন নীতি প্রনয়ন এবং প্রয়োগ পরিকল্পক। আমেরিকায় ম্যারিল্যান্ড রাজ্যের বেথেসদা শহরে বসবাস করছেন। জন্ম ১৯৩৯ সালে ঢাকা শহরে। শিক্ষা প্রশাসনে পিএইচডি করেছেন ২৮ বছর বয়সে ১৯৬৭ সালে মিশিগান স্টেট বিশ্ববিদ্যালয়ে।

ওয়াশিংটন ডিসিস্থ বিশ্বব্যাংকে ১৯৭০ সালে নিয়োজিত হয়েছেন এবং চল্লিশ বছর ধরে জড়িত থেকেছেন। তিনি বিশ্বব্যাংকের প্রথম শিক্ষা নীতি (১৯৭৪) রচনা এবং পরিকল্পনায় সক্রিয় সহায়ক ছিলেন। উন্নয়নশীল দেশ সমূহে দারিদ্র বিমোচন পরিকল্পনায় সহায়তা করতে বিশ্বব্যাংকের তদানিন্তন প্রেসিডেন্ট ম্যাকনামার সম্পাদনায় নয়টি উন্নয়ন খাতে সম্মিলিত বিনিয়োগের নীতি প্রনয়ন করেন ১৯৭৬ সালে।

পেশাগত কারণে বিশ্বের পাঁচটি মহাদেশের ৩৫টি উন্নয়নশীল দেশে ভ্রমন করেছেন এবং দেশ সমূহের শিক্ষানীতি প্রনয়নে এবং পরিকল্পনা প্রয়োগে সহায়তা করেছেন। এইসব দেশ সমূহের মধ্যে রয়েছে ইরান, সৌদি আরব, ইন্দোনেশিয়া, ইথিয়পিয়া, সোমালিয়া, তানজানিয়া, কেনিয়া, উগান্ডা, মরিশাস, গায়ানা, গুয়াতেমালা, পাকিস্তান, বাংলাদেশ প্রমুখ।

মুক্ত বাংলাদেশ সরকারের ডাকে সাড়া দিয়ে ১৯৭৩ সালে একবছর বাংলাদেশ পরিকল্পনা কমিশনে যোগদান করেন এবং বাংলাদেশের প্রথম পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনায় (১৯৭৩-১৯৭৮) শিক্ষা ও মানবসম্পদ উন্নয়ননীতি প্রনয়ন করেন। সেই বছরে জাতির পিতা শেখ মুজিবুর রহমানের সাথে কয়েকবার মুখোমুখি দেখা হয়। কয়েকটি একান্ত বৈঠকে বঙ্গবন্ধু স্বাধীন বাংলাদেশের শিক্ষা নীতি এবং উন্নয়ন সম্পর্কে তাঁর নিজস্ব ধারনা এবং স্বপ্ন তুলে ধরেন এবং উপদেশ দান করেন। ড. আবদুন নূর বাংলাদেশের প্রথম পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনায় বঙ্গবন্ধুর কাছ থেকে প্রাপ্ত নীতি প্রতিফলনের প্রচেস্টা করেছেন। এটি তাঁর জীবনের পরম পাওয়া।

১৯৫৬ সাল থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা কালে সংবাদপত্রে লিখেছেন প্রচুর গল্প এবং উপন্যাস। ঢাকা বেতারে এবং টেলিভিশনে প্রচারিত হয়েছে নানা কথিকা এবং নাটক। মঞ্চস্থ হয়েছে বাংলা একাডেমি মঞ্চে, কার্জন হলে এবং ঢাকা বেতারের উন্মুক্ত মঞ্চে। কিছু কিছু ইউটিউবে এখনো পাওয়া যায়। ‘চার দেয়াল’, ‘শিকর’, ‘মধ্যসমুদ্রে জাহাজ’ এখনো প্রদর্শিত হয়।

ড. আবদুন নূর পাঁচটি উপন্যাস লিখেছেন। তার মধ্যে ‘প্যাগাসাস’ ধরে এনেছে ইংরেজ শাসকদের আমলে দুই শতাব্দির ভারত তথা বাংলা হতে চুক্তিবদ্ধ দাস রপ্তানী প্রথা এবং পশ্চিম ভারতীয় দীপপুঞ্জে তাদের দ্বন্দমুখর জীবন যাপন। ‘শূন্য বৃত্ত’-এ বিধৃত হল আমেরিকায় প্রবাসী বাঙালির আত্ম পরিচয়ের সংগ্রাম। ‘বিচলিত সময়’ তুলে ধরেছে সতেরো শতাব্দির শত শত বাঙালি লেখক এবং কবিদের বাংলা ভাষা রক্ষার প্রয়াস এবং সংগ্রাম। এক হাজার পৃষ্ঠার বিশাল উপন্যাস ‘ঢাকা শহর ঘিরে’। সময়কাল ১৬৬৮ সালের সুবাহ বাংলার মুঘল রাজধানী ঢাকা। বাঙালি আত্ম পরিচয় অন্বেষণে রত রয়েছে গত ছয়শো বছর ধরে এবং সে প্রয়াস রত থাকবে আগামী শত শত বছর ধরে।